এবার মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদ মাহবুব গতকাল (১৪ মে) চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়েছিলেন তার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে।কিন্তু ব্যাংক তাকে টাকা না দিয়েই ফিরিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে চেকের ছবি দিয়ে তিনি ফেসবুকে একটি ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে লিখেছেন ‘আইসিবি ইসলামি ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখায় গিয়েছিলাম টাকা উঠাতে।
ব্যাংক থেকে বলল, ক্যাশ সংকট। টাকা দিতে পারবে না। জানতে চাইলাম কত দিন ধরে এই অবস্থা? উপস্থিত গ্রাহকরা জানলেন, দুই মাস ধরে এই ব্যাংক টাকা দিচ্ছে না। ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কিছুই করণীয় নেই। যত পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করুন। বাংলাদেশ ব্যাংকই আমাদের এই অবস্থার মধ্যে ফেলেছে।
এদিকে ইমাদ উদ-দীন লিখেছেন, এ কেমন অদ্ভুত কথা। আমার টাকা আমায় দিতে কেন এমন অপরাগতা। এই ব্যাংক কি দেউলিয়াত্বের দিকে। তা না হলে কেন এমন গ্রাহক হয়রানি? সংশ্লিষ্টরা কি এসি রুমে বসে বসে কেবল আঙুল চুষেন। মনতোষ দাশের মন্তব্য, মানুষ কোথায় নিরাপত্তার জন্য টাকা রাখবে?
শারিক খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন, এই ব্যাংক ৬ মাস আগে থেকেই রেড লাইনে। তার সাথে আরও ১৫ টি ব্যাংক। চারবাক উত্তরাধুনিক নামে ফেসবুক চালান মহসীন বখত মন্তব্য করেছেন, রিজার্ভেও টাকা নাই। সব চালান হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। ক্ষমতাকেন্দ্রে একটা শক্তিধর মাফিয়াচক্র সক্রিয়। তুমি নিশ্চয় জানো, হাওর কাউয়া দীঘিতে সৌরবিদ্যুত প্রকল্পের নামে এই মৌলভিবাজারের প্রাকৃতিক বিপর্যয় শুরু হবে।
এটা কেবল দেশের টাকা হরিলুটের জন্য নে য়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের গুনধর মাফিয়া ইয়াবা বদির কাউয়া দীঘিতে জমি কেনার সংবাদ নিশ্চয় জানো। কেন্দ্রের সেরা গৌসকুতুব দরবেশ মাফিয়াচক্র তাদের ছোটছোট পোনা ছেড়ে দিয়ে এই অঞ্চলকে আগে করতলে নেবার ষোলকলা পূর্ণ করছে। ব্যাংকগুলো এখন সিক্রেটভাবে কার্যত দেউলিয়া, কিছুদিন পরে কোনো কোনো ব্যাংক নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।
এদিকে সফিকুর রহমান সবুজ লিখেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নামে মাত্র একটা দায়িত্ব নিয়ে আছে। যাদের কাজ টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দেওয়া। দেওয়ান মুক্তাদির গাজীর মন্তব্য,পাবলিকের টাকা নিয়ে তামাশা শুরু হয়েছে। উত্তম বিশ্বাসের বক্তব্য, এস আলম গ্রুপকে লোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছিল? কিছুদিনের মধ্যে ব্যাংকটি কো-অপারেটিভ এ পরিণত হতে পারে। আবদুর রব ভুট্টোর মন্তব্য, শুধুমাত্র দেউলিয়া ঘোষণা বাকি। জাহের আহমদ চৌধুরীর লিখেছেন, অপেক্ষা করুন, অন্য ব্যাংকও শুরু করবে। জাকির চৌধুরীর মন্তব্য, দেশের অবস্থা খুব খারাপ।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার শহরের ব্যস্ততম এলাকা চৌমোহনার কোর্ট রোডে অবস্থিত আইসিবি ইসলামি ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখা। প্রতিদিন শতাধিক গ্রাহক টাকা উঠাতে গিয়ে টাকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। নিজের টাকা ব্যাংক থেকে উঠাতে না পারায় অনেককেই সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। গত ৬ মে টাকার অভাবে প্রায় ৩ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। পরে প্রধান কার্যালয় থেকে গ্রাহকদের কিছু টাকা পাওয়া গেলে তালা খুলে অফিস কার্যক্রম শুরু হয়। এ নিয়ে জেলা শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, হেড অফিস থেকে ২ মাস ধরে বলা হচ্ছে, আমার শাখায় প্রয়োজনীয় টাকা পাঠানো হবে। কিন্তু এতে কোনো সুরাহা হচ্ছে না। আমার এখানে কাস্টমার রয়েছেন ৪০০ জন। কিন্তু টাকা নাই। রোববার এমন হইছে, গ্রাহকরা টাকার জন্য মা-বাপ তুলে গালাগালি শুরু করেছে।
তিনি জানান, রোববার হেড অফিস থেকে বলা হয়েছে, বিএফটিএন করতে, তারা ৫ লাখ টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু রাত ১২ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। টাকা দেওয়া হয়নি। আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি ব্যাংক খুলব না। ব্যাংক খুলে গ্রাহকদের মার খাব নাকি? তিনি হেড অফিসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করলাম আমরা। আর এগুলো তারা নিয়ে নিলেন।